কিন্তু সেসব ঘটনা এখন অতীত। ২০০৬ সালে আবার গ্রেফতার হয় এই দুইজন এবং তাদের সঙ্গীরা। এবার আর জামিন পায় না তারা। ২০০৮ সালে আদালত তাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করে। উভয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তবে কলিনকে কমপক্ষে ৩৯ বছর এবং অ্যামোসকে কমপক্ষে ৩৫ বছর জেলের ভাত খেতে হবে। কমপক্ষে ৩০ বছর সাজা খাটার পর তাদের প্যারোলে মুক্তি দেয়া হতে পারে। তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের সব মিলিয়ে ২২০ বছর জেল হয়। এই বিচারকার্যে সরকারের খরচ হয় ৫০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড। দেশটির পুলিশ ভবিষ্যৎ খুনিদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে দুর্বল করে দিতে এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে। কম্পিউটার সফটওয়্যারের মাধ্যমে কলিন ও অ্যামোসের ভবিষ্যৎ চেহারা তৈরি করা হয়েছে। ৩০ বছর পর অর্থাৎ ২০৪৮ সালে যখন তারা প্যারোলে জেলের বাইরে আসবে তখন যৌবন গত হয়ে বুড়ো চেহারায় কেমন দেখাবে। শুধু ছবি তৈরি করে ক্ষান্ত দেয়নি পুলিশ ও গোয়েন্দারা। গোটা ম্যানচেস্টার এলাকায় বিশাল বিশাল বিলবোর্ডে তাদের বর্তমান ও ‘২০৪৮ সালের বুড়ো চেহারার’ ছবি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। খুনিরা এই এলাকারই ত্রাস ছিল এক সময়। খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারে সহায়তা করায় বিলবোর্ডে জনগণকে ধন্যবাদ দেয়া হয়েছে। দেশটির জনপ্রিয় ডেইলি মেইল পত্রিকায় এই ছবি এবং খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
পুুলিশের এই কৌশলে দারুণ কাজ দিচ্ছে। জীবন শুরু না করতেই জেলে ঢুকে যদি এইরকম বুড়ো হয়ে বের হতে হয় তবে সবকিছু অর্থহীন হয়ে যাবে এই ধারণা থেকে তরুণ যুবকদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা অনেক কমে গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, কলিন ও অ্যামোসের এই দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত ম্যানচেস্টারে একটা খুনের ঘটনাও ঘটেনি। ভবিষ্যতে কোমলমতি কিশোর তরুণরা যাতে একেবারেই এ ধরনের অপরাধে জড়ানোর চিন্তা না করে সে লক্ষ্যে বিশাল বিশাল বিলবোর্ডে এই ‘শয়তানদের’ বুড়ো বয়সের ছবি সেঁটে দেয়া হয়েছে। মনস্তত্ত্ববিদরা বিশ্বাস করেন, এগুলো দেখতে দেখতে শিশু-কিশোরদের মনে অপরাধ জগতের প্রতি ঘৃণা জন্মাবে। জীবন শুরু না করতেই কারাগারে গিয়ে বুড়ো চেহারা নিয়ে বের হয়ে আসতে তারা নিশ্চই চাইবে না।
খুনের শিকার হওয়া পরিবারের সদস্যরা এর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমাদের আপনজনদের এই অপরাধীরা নৃশংসভাবে খুন করেছে। তাদের আর ফিরে পাব না। কিন্তু এই বিলবোর্ডগুলো দেখে শান্তি পাচ্ছি এই ভেবে যে, যদি তারা আদৌ কোনদিন জেল থেকে জীবন নিয়ে বের হয় তবে কেমন করুণ ও ভগ্ন চেহারা নিয়ে বের হবে। তখন তাদের জীবন বলে কিছু থাকবে না। তাদের দেখে ব্রিটেনের শিশু-কিশোররা খুন, খুনি এবং অস্ত্রকে ঘৃণা করবে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য বড় সান্ত¡না। ’
No comments:
Post a Comment