Saturday, April 25, 2009

দৃষ্টিহীনদের দৃষ্টিশক্তি দিতে আসছে বায়োনিক চোখ


কথায় আছে, চোখ থাকতে অন্ধ। কিন্তু যাদের সত্যি সত্যিই চোখ নেই, তাদের অন্ধ বলার দিন যেন ফুরিয়ে এসেছে। বায়োনিক আই বা বায়োনিক চোখের ব্যবহার চোখহীন মানুষকে দৃষ্টিশক্তি দিতে পারে।
অবিশ্বাস্য হলেও তথ্যটি সত্য। লন্ডনের মরফিন্ডস আই হসপিটালে প্রায় সাত মাস আগে রন নামে ৭৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তির ওপর পরীক্ষামূলকভাবে বায়োনিক চোখ স্থাপনের অস্ত্রোপচারটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। তিনি এখন আরগুস-টু (অৎমঁং ওও) নামের বায়োনিক চোখের সাহায্যে রাস্তার সাদা লাইনগুলোকে অনুসরণ করে নিরাপদে চলাচল করতে পারেন বলে জানিয়েছেন।
বায়োনিক চোখ বা আরগুস-টু নামের যন্ত্রটি একটি ক্যামেরা ও ভিডিও প্রসেসর ব্যবহার করে যা সানগ্লাসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। ক্যামেরা এবং ভিডিও প্রসেসরের কাজ হচ্ছে সামনের ছবি তুলে বায়োনিক চোখের বাইরের দিকে থাকা ছোট একটি রিসিভারের কাছে ছবিটি ওয়্যারলেসলি পাঠিয়ে দেয়া। এরপর রিসিভারটি প্রাপ্ত ডাটা ক্ষুদ্র একটি তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎবহের একটি অ্যারেতে পাঠিয়ে দেয় যা রেটিনায় অবস্থান করে। রেটিনা হচ্ছে চোখের একটি বিশেষ কোষ যা চোখের ভেতরের অংশে অবস্থিত। যখন বিদ্যুৎবহের অ্যারেটি উদ্দীপিত হয় বা জেগে ওঠে, তখন তা ব্রেইনে অবস্থিত অপটিক নার্ভ বা দৃষ্টি-সম্পর্কীয় নার্ভে এক প্রকার মেসেজ প্রেরণ করতে থাকে। প্রেরিত মেসেজগুলো মনে মনে উপলব্ধি করা সম্ভব। এখন আশা করা হচ্ছে, রোগী (যার মধ্যে বায়োনিক চোখ স্থাপন করা হবে) ক্যামেরার মাধ্যমে প্রেরিত অর্থপূর্ণ ছবিগুলো বুঝতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী চলাচল করতে পারবেন।
বায়োনিক চোখ নির্মিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেকেন্ড সাইট’ (ঝবপড়হফ ঝরমযঃ) নামক একটি কোম্পানিতে। এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ১৮ জন দৃষ্টিহীনদের বায়োনিক চোখ সফলভাবে স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। মূলত এটি তৈরি করা হয়েছে রনের মতো দৃষ্টিশক্তিহীন ব্যক্তিদের জন্য যারা রেটিনিটিস পিগমেনটোসার দ্বারা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, শুধু ইউকেতেই এর দ্বারা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজারের মধ্যে।
বায়োনিক চোখের দ্বারা উপকৃত হওয়া ৭৩ বছর বয়সী রন তার পদবি বা আসল পরিচয় প্রকাশ করেননি। তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বিবিসিকে বলেন, ৩০ বছর ধরে আমি কিছুই দেখতে পাইনি। যেদিকে তাকিয়েছি শুধু অন্ধকার দেখেছি। কিন্তু এখন আলো আসছে। এতোদিন পর হঠাৎ করেই আলো দেখার সক্ষমতা ফিরে পাওয়াটা সত্যিই বিস্ময়কর ও অনেক আনন্দের।
তিনি আরো বলেন, বায়োনিক চোখ স্থাপনের পর আমি সঠিকভাবে সাদা, ছাই ও কালো রঙের মোজাগুলোকে চিনতে পারছি। অর্থাৎ কোনটার কোন রঙ তা সঠিকভাবে বলতে পারছি। তবে এ মুহূর্তে আমার সবচেয়ে তীব্র আকাক্সক্ষা হচ্ছে, সুন্দর কোনো বিকালে ঘুরতে গিয়ে সূর্যাস্ত দেখতে পারা এবং রাতের আকাশের চাঁদ দেখতে পারার সক্ষমতা অর্জন করা।
এদিকে রনের এ অবিশ্বাস্য উন্নতি দেখে আনন্দিত ও বিস্মিত তার স্ত্রী। তিনি বলেন, রন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি কাজ করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে ধোয়ামোছার কাজ এখন সে খুব ভালো করতে পারে কোনো সমস্যা ছাড়াই।
রনের চোখে অস্ত্রোপচারের কাজ করেন চিকিৎসক রেটিনাল সার্জন লিন্ডন ডা. ক্রুজ। তিনি বলেন, পরীক্ষামূলক এ সার্জারিতে রোগীদের উন্নতি দেখে আমরা অনেক উৎসাহিত হচ্ছি। পরীক্ষামূলক হলেও প্রতিটি অস্ত্রোপচারই কিছুই দেখতে পান না এমন রোগীদের কিছুটা হলেও বিকল্প দৃষ্টিশক্তি দিতে পারছে যা বায়োনিক আইয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ ফরওয়ার্ড। তবে পরীক্ষাটি আরো দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চালানো হতে পারে। সে ক্ষেত্রে নতুন এ প্রযুক্তির সাফল্য নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া বা পরীক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
বায়োনিক চোখের নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা কোসেনডাইয়ের মতে, শিগগিরই নতুন এ প্রযুক্তিটি ‘অমূল্য’ বলে প্রমাণিত হবে। তবে তিনি স্বীকার করেন এ আবিষ্কারকে সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে এখনো অনেক কাজ বাকি। তিনি বলেন, আমরা বোঝার চেষ্টা করছি বায়োনিক চোখের সাহায্যে কোন লেভেলের দৃষ্টিশক্তি আমরা দিতে পারবো।
তিনি আরো বলেন, তত্ত্বমতে, দৃষ্টিহীনরা এর মাধ্যমে একটি ভালো ধরনের দৃষ্টিশক্তি অর্জন করতে পারবেন। তবে আমাদের প্রযুক্তি এখনো সে পর্যায়ে পৌঁছেনি। এখন আমরা নির্ণয় করার চেষ্টা করছি বায়োনিক চোখের ব্যবহারকারীরা এর মাধ্যমে কতোটা উপকৃত হতে পারেন এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনে এটি কতোটা ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারেন।

No comments: