Sunday, May 10, 2009

পৃথিবীর সব মা-ই সেরা মা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে মা দিবস পালিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে এ দিবসে তেমন কর্মসূচি না থাকলেও কিছু কিছু সংস্থা, সংগঠন ও ব্যক্তি নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দিনটি পালন করে। মা দিবস পালনের ইতিহাস বেশ প্রাচীন।

খৃষ্টপূর্ব ছয় সাল থেকে রোমানরা প্রথম মা দিবস পালন শুরু করে- এরপর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সময়ে মা দিবসের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এ সময় প্রধানত অধিক সন্তানের মাদেরই পুরস্কার প্রদান করে সন্তান জন্মহার বৃদ্ধির জন্য অনুপ্রাণিত করা হতো।

১৯১৪ সালে প্রেসিডেন্ট উইড্র উলসন-এর সময় আমেরিকায় প্রথম মা দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়, এরপর ১৯২২ সালে ফ্রান্সে প্রথম মা দিবস শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান ১৯৪১ সালে জাঁকজমকভাবে মা দিবস পালন করে।

পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে এ দিবসকে রাষ্ট্রীয় উৎসবের মর্যাদা দেয়া হয়। মায়েদের জন্য প্রতিবছর ৩১ মে সুইডেন এবং মে মাসের শেষে ইংল্যান্ডে, ১৪ মে আমেরিকা, ২৬ মে পোলান্ড এবং মে মাসের শেষ রবিবার জার্মানীতে মা দিবস পালিত হয়।

বাংলাদেশেও ১০ মে মা দিবস পালন করা হয়। জন্মের পর শিশুর প্রথম ভাষা- মা। মা উচ্চারণের সাথে সাথে হৃদয়ে যে আবেগ ও অনুভূতি সৃষ্টি হয়, তাতে অনাবিল সুখের প্রশান্তি নেমে আসে। মা শিশুর সার্বজনীন ভাষা।

আমরা মায়ের কাছেই প্রথম কথা বলা শিখি। মা প্রথম কথা বলা শেখায় বলেই মায়ের ভাষা হয় মাতৃভাষা। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালবাসা সহজাত গুণ। এই ভালোবাসার কারণেই সুন্দর সৃষ্টির ধারা প্রবাহমান। মা হচ্ছে মমতা-নিরাপত্তা-অস্তিত্ব, নিশ্চয়তা ও আশ্রয়।

মা সন্তানের অভিভাবক, পরিচালক, ফিলোসফার, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও বড় বন্ধু। সন্তানের প্রতি মায়ের এই তীব্র মমতার ব্যাখ্যায় বিজ্ঞান বলে, মায়ের দুধে এক প্রকার রাসায়নিক যৌগিক পদার্থ আছে-যা সন্তানের দেহে প্রবেশ করলে মা ও সন্তানের মধ্যে চুম্বক প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে নিবিড় বন্ধন সৃষ্টি হয়।

মায়ের দেহে নিউট্রোপেট্রিক রাসায়নিক পদার্থ থাকায় মায়ের মনের মাঝে সন্তানের জন্য মমতা জন্ম নেয়, মায়ের ভালোবাসার ক্ষমতা বিজ্ঞানের মাপকাঠিতে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। পৃথিবীতে আসার আগে সন্তান মায়ের গর্ভে তিলে তিলে বড় হয়। মায়ের দেহ থেকেই খাদ্য গ্রহণ করে।

নিজের জীবন বিপন্ন করেও মা সন্তানের সেবা-যত্ন এবং পরিচর্যা করেন। প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) তাঁর মা হালিমাকে সব সময় সম্মান করতেন, তাঁকে দেখা মাত্র উঠে দাঁড়াতেন এবং ছুটে যেতেন। তাঁর অভিযোগ সম্পর্কে সব সময় সচেতন ছিলেন।

প্রিয় নবী মাকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য সবাইকে নির্দেশ দিতেন। হিন্দু ধর্মে মা দূর্গা কল্যাণের প্রতীক ও দেবী মহামায়া অসুর নাশিনী। শান্তির অগ্রদূত। স্বরস্বতি, মনসা, শীতলা, ওমা-রমা, তারা-কালী, শ্যামা মাতৃরূপেই পৃথিবীতে আগমন করেন।

কবি-সাহিত্যিকরা মাকে নিয়ে মূল্যবান প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা লিখেছেন। রুশ লেখক ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ গ্রন্থটি সারা বিশ্বে সমাদৃত। ‘আমাকে শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি দেবো’-নেপোলিয়নের এই ঐতিহাসিক বাণীর উপলদ্ধি হতে মায়েরাই পারে উন্নত দেশ, সমাজ ও জাতি উপহার দিতে।

মা হারা ছেলে- মেয়েদের অনেকাংশই নানা মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে তারা প্রায়ই বাধাগ্রস্ত হয়। সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষা ও চরিত্র গঠনে মায়ের ভূমিকাই মুখ্য। জাতিকে শিক্ষিত করে তোলার ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যন্ত তাৎপর্যবহ।

প্রতিটি মা তাদের সন্তানদের সুশিক্ষিত করে তুললে, জাতি পাবে সুশিক্ষিত সমাজ। একজন শিক্ষিত ও সচেতন মা-ই হচ্ছেন শিক্ষিত সমাজ-বিনির্মাণে নিপুণ কারিগর। দেশ ও জাতির কল্যাণে যারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন তারা কোন না কোন মায়ের সন্তান।

মা শুধু সন্তান ও পরিবার নয়, সমগ্র জাতির সম্পদ। সন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুনাগরিক করার নেপথ্যে থাকে প্রজ্ঞাময়ী মায়ের অহর্নিশি সাধনা। মায়েরা পরম যত্নের সঙ্গে আদরের সন্তানদের গড়ে তুলেছেন, দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।

সমাজের খুব গভীরে লুকিয়ে থাকা সীমাহীন অপ্রাপ্তি ও অমর্যাদার দেয়াল ভেদ করে এদেশের মায়েরা সন্তানদের সফল এবং প্রতিষ্ঠিত করার ব্রত নিয়ে আমরণ ত্যাগ স্বীকার করে যান। অর্থ আর স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে যায় চিরদিন সে হলো মাতৃত্ব।

মা দিবস মায়েদের আরো সচেতন করে সার্বিক শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে, আদর্শ মা হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাবে এবং মাতৃত্বসুলভ উন্নত মননশীলতার জন্ম দেবে যার পরোক্ষ ফল হিসেবে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে এবং আগামী প্রজন্ম পাবে একটি সুখী, সুন্দর, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ।

মা দিবসে বিশ্বের সমস্ত মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও দেশের সার্বিক শিক্ষা প্রসারের মূল নেপথ্য শক্তি মায়েদের সচেতন করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

No comments: